বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪১৬ জন শিক্ষার্থী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার একটি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির কারণে ওই বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪১৯ জন পরিক্ষার্থী থাকলেও আজ পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪১৬ জন। তাদের উখিয়ার কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে উখিয়া থানা পুলিশ দুটি বাসের ব্যবস্থা করে। সকালে তাদেরকে ওই বাসে কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেলা ১১টায় কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উখিয়ায় আসা এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক শফিউল আলম বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি এখনও থমথমে। আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সন্তানদের অন্যত্র পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করায় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হোসনে জয়নাব বলেন, ‘প্রথমে ছেলেমেয়েরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকলেও পরীক্ষা দিয়েছে খুব শান্তিপূর্ণভাবে। এতে কোনও সমস্যা হয়নি।’
উখিয়ার কুতুপালং ইউনিয়নের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতে খবর আসে, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এরপর সারারাত ধরে পরীক্ষা কেন্দ্রের সিট থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের কোনও ধরনের সমস্যা হয়নি।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোছাইন সজীব জানান, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে কোনও ধরনের সমস্যা হয়নি। সকাল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরীক্ষা দিতে আসলে দুশ্চিন্তা হয়। তাই পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি আগামী সব পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়ে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কোনারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সেটি বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মো. ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে আরও পাঁচ জন।
এর আগে শুক্রবার বিকালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হন উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক তরুণ। এই পরিস্থিতির কারণে ঘুমধুমের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।