পবিত্র রমজান মাস শুরুর পর থেকেই সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রায় জনশূণ্য। পর্যটকহীন অবস্থায় অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে রমজান মাসের শেষ সময়ে এসে ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। রং-তুলির আঁচড়ে সাজছে জনপ্রিয় সব হোটেল-রিসোর্ট।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ঈদ ও বৈশাখের ছুটিতে প্রচুর লোকসমাগম হবে সিলেটে, ব্যবসাও হবে ভালো।
বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা সিলেট। সিলেটের নাম শুনলেই পাহাড়, টিলাবেষ্টিত চা-বাগান, সঙ্গে সাদা পাথর ও জাফলংয়ে স্বচ্ছ পানি চোখে ভেসে ওঠে পর্যটকদের।
এ ছাড়া দেশের অন্যতম মিঠাপানির জলারবন রাতারগুলের প্রকৃতি, জাফলংয়ে মায়াবী ঝরণা, আর নীল পানির নদ লালাখাল তো রয়েছেই। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.) এবং শাহপরান (রহ.) মাজারেও পর্যটকদের ভিড় জমে।
সিলেটের জনপ্রিয় সব পর্যটনকেন্দ্রে সারাবছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বর্ষা মৌসুমেই স্বরূপে ফিরে আসে। মেলে ধরে নিজেদের সৌন্দর্য।
সিলেট নগর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেলে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। এছাড়া, রিসোর্টগুলোও প্রায় অর্ধেক বুকিং করে রাখা হয়েছে।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সিলেট নগরীর প্রথম সারির হোটেল ও শহরতলীর রিসোর্টগুলোতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ছাড়ও দেয়া হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ সাদা পাথরে দীর্ঘদিন ধরে নৌকার মানুষ পারাপার করেন জমির উদ্দিন। তিনি জানান, ‘রমজানের আগে সারা বছরই পর্যটক আসে। এই মাসটাতে খুব একটা পর্যটকরা আসেন না। তবে আশা করি এবার ঈদে বেশ পর্যটক আসবেন। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।‘
জাফলংয়ের ব্যবসায়ী কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘রমজান আসার পর থেকে ব্যবসায় ভাটা। সারা বছর এই সময়ের অপেক্ষায় আমরা থাকি। আশা করি ব্যবসা ভালো হবে।‘
ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে এসে যাতে হয়রানি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার কেউ না হন, এ জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা, তৎপর আছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ এরই মধ্যে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগম কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে টুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত থাকবে।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিলেটে এসে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে। ইতোমধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশকেও বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও সিজিএস এর সভাপতি শান্ত দেব বলেন, ‘পর্যটকদের পর্যাপ্ত বুকিং হচ্ছে। তবে, আবহাওয়ার কারণে পর্যটকরা কেমন আসবেন তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।‘
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘প্রশাসনের সাথে ইতোমধ্যে আলাপ হয়েছে, তারা পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।‘
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্য আশানুরুপ না হলেও এবার সিলেটের পরিবেশ স্বস্তিদায়ক ছিল। ক্রেতারা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পেরেছেন।‘
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, সারা বছরই সিলেটে পর্যটকরা আসেন। শুধু পর্যটন স্পটেই নয়, বিমান পথ, রেল স্টেশন, বাসস্টেশন গুলোতে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।‘
তিনি বলেন, পর্যনটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। কেউ সমস্যায় পড়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘