ঈদের ছুটি শেষে ফিরছেন প্রবাসে, সঙ্গে আনা লাগেজ এখনও পাননি প্রবাসী

ঈদের ছুটি পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন। তাই প্রবাসী কামরুল হাসান সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছিলেন। ২২ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা যেন চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। সেজন্য ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী, মা আর আত্মীয় স্বজনদের জন্য সঙ্গে নিয়েছেন নানা উপহার। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! ৫ জুলাই সৌদি থেকে দেশে আসেন আর ছুটি শেষে ফিরে যাবেন ২৬ জুলাই। ফিরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলেও সঙ্গে আনা দুইটি লাগেজ এখনও পাননি প্রবাসী কামরুল হাসান।

এভাবেই প্রতিনিয়ত লাগেজ নিয়ে বিপত্তিতে পড়ছেন প্রবাসীরা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় ভোগান্তির অভিযোগ তুলছেন প্রবাসীরা।

ওমান এয়ারওয়েজের (ডব্লিউওয়াই-০৩১৫) ফ্লাইটে কামরুল হাসান সৌদি আরব থেকে ওমান হয়ে ঢাকায় আসেন। একটি হাত ব্যাগ আর দুইটি লাগেজ ছিল তার সঙ্গে। ওমানের মাস্কাট বিমানবন্দরে তার সঙ্গে থাকা হাত ব্যাগটিও বুকিংয়ে দিতে বাধ্য করে ওমান এয়ার। পরে ঢাকায় এসে শুধু সেই হাত ব্যাগটি পেলেও বাকি দুইটি লাগেজ আর পাননি।

কামরুল হাসান বলেন, আমি সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে দেশে আসছি। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফ্লাইট অবতরণ করে। ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ বেল্টে গেলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও লাগেজ পাইনি। পরে ওমান এয়ারের একজন কর্মকর্তা জানালেন, আমার লাগেজ একই ফ্লাইটে আসেনি। দেশে আসলে আমার বাড়িতে লাগেজ পৌঁছে দেবে বলে নাম ঠিকানা রেখে দেয় তারা।

আশা নিয়ে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে চলে যান কামরুল হাসান। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ২১ জুলাই পর্যন্ত লাগেজ পাননি তিনি। অন্যদিকে ছুটি শেষে ২৬ জুলাই সৌদি ফিরতে হবে কামরুলকে । ফলে ফিরে যাওয়ার আগে লাগেজ ফেরত পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার লাগেজ দুইটিতে কমপক্ষে এক লাখ টাকা মূল্যমানের জিনিসপত্র ছিল। বিমানবন্দর থেকে বলা হয়েছিল, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বাড়িতে লাগেজ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পাঠানো তো দূরে থাক, ফোনও রিসিভ করছে না। আমার সৌদিতে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ২৬ জুলাই ফিরে যাবো, কিন্তু এখনও লাগেজ পাইনি।’

কামরুল হাসান বলেন, ২২ বছর সৌদি আরবে আছি। আগে কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। দুই ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী, মা, আত্মীয়দের জন্য ঈদ উপলক্ষে কিছু জিনিসপত্র এনেছিলাম। পরিবার পরিজনের সামনে আমি কেমন পরিস্থিতিতে দিন পার করছি, সেটি বলে বোঝাতে পারবো না।

সাধারণত বাজেট (লো কস্ট ক্যারিয়ার) এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড হয়। বর্তমানে শুধু বাজেট এয়ারলাইন নয়, সব ধরনের এয়ারলাইনের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। এর মধ্যে ওমান এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, এয়ার অ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন, কুয়েত এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড বেশি হচ্ছে।

ঈদের সময় ছুটিতে আসা অনেক প্রবাসী দেশে এসে লাগেজ পাননি। কেউ পাঁচ দিন, কেউ ১০ দিন পরে পেয়েছেন। অনেকে এখনও দিন গুনছেন।

লাগেজ লেফট বিহাইন্ড কেন হয়?

এভিয়েশন খাতের পরিভাষায়, ‘লাগেজ লেফট বিহাইন্ড’ মানে হচ্ছে একটি ফ্লাইটে যাত্রী তার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছালেও তার লাগেজগুলো একই ফ্লাইটে আসেনি। একটি উড়োজাহাজ আকাশে উড্ডয়নের ক্ষেত্রে ভার বহনের সক্ষমতা নির্ধারিত থাকে। খালি উড়োজাহাজের ওজন, যাত্রীদের ওজন, যাত্রীদের লাগেজের ওজন, উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের ওজন সবকিছু সমন্বয় করে উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত ওজন ঠিক রেখে ফ্লাইটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

কখনও কখনও ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে গেলে এয়ারলাইনগুলো লাগেজ কমিয়ে ওজনের সমন্বয় করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরবর্তী ফ্লাইটে লাগেজ নিয়ে এসে যাত্রীদের দেওয়া হয়। এছাড়া কারিগরি ত্রুটি, মিস হ্যান্ডলিং, ভুল ট্যাগিং, ট্রানজিটে যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা কারণে লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীদের লোড ফ্যাক্টর ম্যানেজ করতে লাগেজ লেফট বিহাইন্ড করে থাকে এয়ারলাইনগুলো।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, লাগেজ লেফট বিহাইন্ড কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। কিভাবে সমস্যা সমাধান করে দ্রুত লাগেজ পেতে পারেন যাত্রীরা সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন