শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা গ্রামের বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম কুটি। দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর একই ইউনিয়নের সিচনী-ডাবরের মাঝামাঝি পাগলা-জগন্নাথপুর সড়কে গুরুতর জখমী অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় থাকে। পরে স্থানীয়রা মিলে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ তখন এ ঘটনাকে সড়ক দূর্ঘটনা বলতে চাইলেও এ মৃত্যু নিয়ে তখন থেকেই সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। ঘটনাটিকে সড়ক দূর্ঘটনা মানতে নারাজ নিহত কুটির পরিবার।
কুটির পরিবার বলছেন, ‘কোনো একটি পক্ষ সুপরিকল্পিতভাবে ফরিদুল ইসলাম কুটিকে হত্যা করেছেন। তাই অধিকতর তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
কুটি নিহত হওয়ার ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে একটি মামলা দায়ের করে তার পরিবার। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র কাছে আছে। তবে, নিহত কুটির পরিবারের অভিযোগ মামলার তদন্তের কাজ খুব বেশি এগুচ্ছে না। মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতামত করতেই শনিবার সকাল ১১টায় দরগাপাশায় আবদুর রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন এলাকাবাসী।
সভায় সভাপতিত্ব করেন দরগাপাশা গ্রামের মুরব্বি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী। নিহত ফরিদুল ইসলাম কুটির ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমান পাপ্পুর পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- শিহাব উদ্দিন চৌধুরী, ফজলে হোসেন সেলাল, মুরাদ চৌধুরী, হিফজুর রহমান চৌধুরী দিদার, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, শারন চৌধুরী, সদ্দর উল্লাহ, হাফিজ সবুজ মিয়া, মনফর উল্লাহ, আবদুস সত্তার, কুদরত উল্লাহ, মো. আলী চৌধুরী শাহ আলম, শ্যামল চৌধুরী, সজ্জাদুর রহমান, এওর চৌধুরী, বাদশা মিয়া, আবদুর রহমান জামী, মামুন চৌধুরী ও নূরাই মিয়াসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কুটি হত্যার বিচারের দাবিতে একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল করেন এলাকাবাসী।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ‘ফরিদুর রহমান কুটি একজন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তার মরদেহ আমরা দেখেছি। সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যু আর এ মৃত্যুর মধ্যে দিনরাত তফাৎ। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস যে, কুটি দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেননি, কুটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রথম থেকে পুলিশ ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো তারা। শান্তিগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি খালেদ চৌধুরী নিহত কুটির পরিবারের লোকজনকে আক্রমনাত্মক কথা বলেছেন। মামলা নেওয়া কিংবা শান্তনা দিয়ে দু’টি কথা বলবেন তো দূরের কথা তিনি বরং কুটির মৃত্যুকে সড়ক দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ নয় মাস পাড় হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে মামলাটি পিবিআইয়ে আছে। তবে দেখার মতো কোনো অগ্রগতি নাই। পিবিআইয়ের প্রতি আমাদের জোর দাবি, দ্রুত গতিতে যেনো কুটি মিয়ার হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হয়।’
ফরিদুল ইসলাম কুটির ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমান পাপ্পু বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছ। ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এলাকায় পোস্টারিং করে বিচার চাইতে হচ্ছে। শান্তিগঞ্জ থানার সাবেক ওসি খালেদ চৌধুরী সাহেব আমাদেরকে মানুষের মূল্যায়ণও করেন নি। এখন মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে আছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে আমার ভাইয়ের খুনিদের শাস্তি চাই।’
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজি মোক্তাদির হোসেন বলেন, মামলাটি বর্তমানে পিবিআইয়ের কাছে আছে। তারাই দেখছেন।