আমিনুল ইসলাম লিটন আপনি আমাদের লজ্জায় ফেলে দিলেন। আপনাকে বড় স্নেহের চোখে দেখতাম। আপনি আমাদের সংগঠন ‘শিকড়’এর অনুষ্ঠানাদিতে এসে কবিতা আবৃত্তি করতেন। সিলেটে শিকড়এর জন্ম হয়েছিল স্বৈরাচার আর মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনের অঙ্গীকার নিয়ে। আমি ও শুভেন্দু ইমাম ছিলাম এই সংগঠনের নেতৃত্বে।
সিলেটে এক সময় ‘কথাকলি’ গঠিত হয় আন্দোলন নয়, শুদ্ধ আবৃত্তি চর্চার কথা বলে। কথাকলি গঠিত হলে আপনি কথাকলি’তে যোগ দেন। কথাকলিতে আরো যোগ দেন আবৃত্তি অন্তপ্রাণ শামীমা চৌধুরী ও নাসরিন চৌধুরী দুই বোন। ধীরে ধীরে সংগঠনটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। ডালপালা মেলে এটি অনেক বড় সংগঠন এখন। নিশ্চয় এতে আপনার শ্রম ও মেধা রয়েছে এর গোড়ায়।
অনেকের সাথে কথা হয়েছে, সকলেই আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলে জানিয়েছেন। তারা প্রতিবাদীও হয়েছেন। তবে এতে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা প্রমাণের দায়িত্ব আপনার। কিন্তু মনে রাখুন, এখন অন্য কোনো সংগঠক কোন মুখে, কার মেয়ে বা বোনকে বলবে আপনার সন্তান বা বোনকে আমাদের সংগঠনে দিন। বিশ্বাসটা নাড়িয়ে দিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করে হোঁচট খেলাম গত ক’সপ্তাহের নানা দুঃসহ সংবাদ শুনে। সংস্কৃতি জায়গাটি হল নিজে পরিশীলিত, চরিত্রবান ও স্বপ্নবান হওয়া এবং অন্যের মাঝে তা সঞ্চারিত করা। শুধু মেধা থাকলে চলে না বা মেধাবী হলে হয় না। শুদ্ধ মানুষ হতে হয়। আপনি মেধাবী ছিলেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু শুদ্ধ মানুষ প্রবঞ্চটি আপনার মাঝে ছিল না। আপনার শুদ্ধ মানুষ ভাবটির ভেতরে ছিল মেকি ভালো মানুষী। এটা আগে আমাদের বোধে আসেনি।
এতো কথা লিখতে যাবার জন্মদাতা আপনি। অযথা লিখে আপনার বদচোখ পড়ার বেদবুদ্ধি আমার নেই। লিখতে বাধ্য হলাম, আপনাকে নিয়ে মুখ দেখাতে পারছে না আজকের সিলেট অঞ্চলের সংস্কৃতিকর্মীরা। অনেকের সাথে কথা হয়েছে, সকলেই আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলে জানিয়েছেন। তারা প্রতিবাদীও হয়েছেন। তবে এতে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা প্রমাণের দায়িত্ব আপনার। কিন্তু মনে রাখুন, এখন অন্য কোনো সংগঠক কোন মুখে, কার মেয়ে বা বোনকে বলবে আপনার সন্তান বা বোনকে আমাদের সংগঠনে দিন। বিশ্বাসটা নাড়িয়ে দিলেন।
শিশুরা সব সময়েই সংস্কৃতির জগতে মূল প্রাণ ভোমরা। পরের সন্তানকে নিজের সন্তান ভাবা বা বোন ভাবার নামই সংস্কৃতির মৌলিক আদর্শ। বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন তৈরি করার মহৎ কাজটির সম্মিলনের নাম সংস্কৃতি চর্চা। শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই বন্ধু এখানে। আমরা ৭০ দশক থেকে সংস্কৃতি অঙ্গনে নিষ্ঠার সাথে শিশুকিশোর তরুণ তরুণীদের নিয়ে কাজ করছি, বিলাত জীবনেও সক্রিয়ভাবে রয়েছি সাংস্কৃতিক বলয়ে। আজ পর্যন্ত তো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। শুনেছি, অনেক আগ থেকেই আপনার বিরুদ্ধে শিশুযৌন হয়রানির তীর। কিন্তু সয়ে গেছে অনেকে, আত্মসম্মানের ভয়ে মুখে খোলেনি কেউ। যে বা যারা মুখ খুলেছে, ভুক্তভোগী অতিষ্ঠ হয়েই প্রতিবাদী হয়েছে।
এরপর আপনার প্রদত্ত বক্তব্যে কেউ খুশি নন। এও শুনেছি কথাকলি ছাড়তে আপনি নারাজ। কথাকলি সংগঠনটিকে বাঁচতে দিন। সাংস্কৃতিক জোট নাকি আপনাকে সভাপতি পদ থেকে বাদ দিয়েছে। আপনি সরে যান। সবাইকে মুক্ত করেন আপনার দায় থেকে। এটাই সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা।
মূলত মনে হচ্ছে, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ ও ‘সততার দুর্ভিক্ষ’ দুটিই আপনার মাঝে পাশাপাশি বাস করছে সুপ্তভাবে। আমাদেরকে আর লজ্জা দিবেন না আমিনুল ইসলাম লিটন। সম্ভব হলে, ক্ষমা চেয়ে সকলের ভালোবাসা অর্জন করুন।
- হামিদ মোহাম্মদ। কবি ও লেখক।