তুরেজা বেগম (৭০)। বিয়ের পর কোন সন্তানের মুখ দেখেননি। থাকতেন ভাই মৃত মোবারক আলীর বাড়িতে। কিন্তু শেষ বয়সে এসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে মাঠির ঘরে থাকতেন তিনি। বন্যার পানি ঘরে উঠায় জীবন বাঁচাতে সবার সাথে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। যতদিন বন্যার পানি ছিলো ঠিক ততদিনে ভেঙে পড়েছে থাকার একমাত্র ঘরটি। এখন তিনি দুর্বিষহ জীবনপাড় করছেন।
এমন বাস্তবতায় চেয়েছেন সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন- ‘আমারে এখান ঘর বানাইয়া দেউক্কা।’
তুরেজা বেগমের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের খালপাড় পূর্বপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত শহিদুল্লাহ। দীর্ঘদিন থেকে ভাই মোবারক আলীর বাড়িতে থাকছেন। ভাইও মারা গেছেন অনেকদিন আগে।
সরেজমিন গেলে দেখা যায়, জরাজীর্ণ হয়ে আছে মাঠির ঘরটি। চারিদিকে ভাঙা। যে কোন সময় সাপ-বিচ্ছু ঘরে প্রবেশ করতে পারে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঘরটি।
এসময় কথা হয় তুরেজা বেগমের সাথে। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন- ‘ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। আমার কোন সন্তান নেই। শেষ বয়সে এসে বন্যা শেষ আশ্রয়স্থল ঘরটিও ভেঙে দিছে। এখন কোথায় থাকব?
তুরেজা বেগম সমাজের সকল বিত্তবানদের সহযোগিতা চান। তিনি একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে অত্র ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লায়েছ আহমদ লায়েন বলেন- ‘সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ঘর মেরামত করে দেওয়া হবে। আমার ওয়ার্ডের অনেককে বলেছি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ছবি দেওয়ার জন্য। তুরেজা বেগমের নাম তালিকায় আছে কি না জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’
তিনি বলেন- ‘সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এসকল মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে।’
ঘরের আকুতি শুধু তুরেজা বেগমেরই নয়, সিলেটের লাখো বানভাসি মানুষের। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য সরকারের কাছে তালিকা পাঠিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, বন্যায় সিলেট জেলার প্রায় ৪০ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি এখনো পুরোপুরি নেমে যায় নাই। তবে যেসব এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে, সেসব এলাকায় ঘর বাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে অনুদান আসলে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি তা সবার কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।