আবারও অরুণাচল ইস্যুতে বিতর্ক উস্কে দিলো চীন। সোমবার (২৮ আগস্ট) প্রকাশিত চীনা মানচিত্রে গোটা অরুণাচল প্রদেশকেই চীনের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আকসাই চীনকেও। শুধু তাই নয়, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরকেও তারা তাদের অংশ বলে দাবি করেছে শি জিন পিং এর দেশ। আর সেটা এমন সময় যখন, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠক শেষ হয়েছে।
চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ‘এক্স’ হ্যান্ডেল (টুইটার) মারফত জানিয়েছে, চীনের সীমারেখা ও আন্তর্জাতিক নীতি মেনেই এই মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি–২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভারতে আসার কথা। তার আগেই এই মানচিত্র প্রকাশ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নিরিখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ গত ছয় দশকের। ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর সম্পর্কের অবনতি লক্ষ করা যায়। ভারত সরকারিভাবে স্বীকার না করলেও বিরোধীদের অভিযোগ, ওই সময় লাদাখের অন্তত ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনা সেনারা গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর ২০২০ সালের সংঘর্ষ পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে ভারত বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও চীন তা কানে তোলেনি।
সেই বরফ গলাতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ব্রিকস’ সম্মেলনের এক ফাঁকে মোদি–শি জিন পিং বৈঠক হয়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেছিলেন, দুই নেতা লাদাখ সমস্যার সমাধানে সহমত হয়েছেন। ওই বৈঠকের পর পরই চীনের এই মানচিত্র প্রকাশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সহায়ক নয় বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা।
অরুণাচল প্রদেশকে চীন দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে। ভারতের মতে, ওই প্রদেশ তাদের ছিল, আছে ও থাকবে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে আকসাই চীন তারা দখল করেছিল বলে দাবি জানিয়ে আসছে চীন। ভারত সেই দাবি মানতেও নারাজ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে দুই দিন ধরে জি-২০ গোষ্ঠীর বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে চীন অনুপস্থিত ছিল। মে মাসের শেষ সপ্তাহে ওই বৈঠকের পর পরই চীন অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নাম তাদের ভাষায় রাখে। এমন নামকরণ তারা ২০১৭ ও ২০২১ সালেও করেছিল। ভারত তখনো আপত্তি জানিয়েছিল।
এবার চীন গোটা অরুণাচল প্রদেশকেই তাদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করলো যা ভারত-চীন সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলবে বলেই কুটনৈতিক মহলের ধারণা।
