নির্মল নীলাকাশ, অমল ধবল মেঘের ভেলা আর শুভ্র কাশবনের নাচন- এসব নিয়েই শরতের মাতামাতি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে প্রকৃতিতে আগমন শুভ্র শরতের। মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির মাঝে প্রকৃতিতে শরৎ নিয়ে আসে এক নৈসর্গিক মুগ্ধতা। শুভ্র শিউলির মন মাতানো ঘ্রাণ আর দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠের নিরন্তর ঢেউয়ের দোলা সৃষ্টি করে এক নতুন দৃশ্যপট। প্রকৃতিতে চলে অপরূপ রূপের লীলাখেলা।
ঋতুবৈচিত্র্যের দেশে শরতের আগমনী বার্তা ইট-পাথরের নগরে বোঝার উপায় নেই। আর বোঝা গেলেও নগরজীবনের ব্যস্ততায় উৎসব আয়োজন করা হয়ে ওঠে না। তবুও কিছু আয়োজন নগরবাসীকে এখনও জানান দিয়ে যায়, ঋতুচক্রের আবর্তে প্রকৃতিতে এসেছে শরত।
আজ শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শ্রুতি সিলেট প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘আগমনী আহ্বানে’, যা নগরবাসীর মনে এনে দেয় অপার প্রশান্তি। নীল-সাদা শাড়ি, খোঁপায়-হাতে ফুলের সাজ আর নাচে-গানে চলে শরৎ বন্দনা।
শরৎ উৎসবের মূল আয়োজনে পরিবেশন করা হয় গান-কবিতা-নৃত্য। ছিল ‘শরৎ কথন’ পর্ব। এতে ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশের প্রকৃতির সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
শ্রুতি সিলেটের সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত এ আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও জেলা শিশু সংগঠক সাইদুর রহমান ভুঁইয়া।
আরও উপস্থিত ছিলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শামসুল আলম সেলিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু, সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত প্রমুখ।
পাশাপাশি শরৎ কথন পর্বে অংশ নেন শ্রুতি’র সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত। তারা বলেন, সোনালি রোদ্দুরের ঝিলিমিলি আর রাতের জ্যোৎস্নায় মাতোয়ারা মন। নদীতীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায় শুভ্র কাশফুল। শরতের কাশফুলে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। শ্রুতি সিলেট তার দীর্ঘ ২২ বছরের পথচলায় আলোর মিছিল, বর্ণমালার মিছিল, আঁধার ভেঙে আসুক, পিঠা উৎসব, বর্ষবরণ উৎসব, বর্ষা উৎসব, শরৎ উৎসবসহ নানা উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে এবং তাদের এই কাজে যুক্ত করছে। যা আগামীর মানবিক বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
দ্বিতীয় পর্বে সান্ধ্য অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিনহা। আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশন সিলেটের সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার নিরাজ কুমার জওয়সয়াল ও সহকারী পুলিশ কমিশনার গৌতম দেব।
অর্ধদিবসব্যাপী আয়োজনে সমবেত নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি পরিবেশন করে জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, গীতবিতান বাংলাদেশ, নৃত্যশৈলী, ছন্দনৃত্যালয়, সুরের ভূবন, নৃত্যরথ, ললিত মঞ্জরি, প্রমা দেবী ও তার দল, সুরের ভূবন, অনির্বান শিল্পী সংগঠন এবং একক সংগীত পরিবেশন করেন গৌতম চক্রবর্তী, প্রদীপ মল্লিক, ইকবাল শাঁই ও লিংকন দাশ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন জ্যোতি ভট্টাচার্য, নাজমা পারভীন প্রমুখ।