পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং এর থেকে বেশি কিছু চায় না। তারা কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেনি। এই শব্দই কারও মুখ থেকে উচ্চারিত হয়নি। এছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিষয়টিও কেউ বলেনি।
রবিবার (৮ অক্টোবর) বিকালে মার্কিন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে পর্যবেক্ষক মিশনের অন্যতম প্রধান কার্ল এফ ইন্ডারফুর্থ বলেন, তারা একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরা সবাই অত্যন্ত পরিপক্ব লোক। এরা আসছেন একটা অবাধ নির্বাচন অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করতে। তারা জানতে এসেছেন, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমরা কী কী কাজ করেছি। তাদের নিজেদের কোনো মতামত নেই। তারা শুধু জানতে চেয়েছেন, কিভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি, আমাদের এসব দেশে বেশ সংঘাত হয়। নির্বাচন হলে সংঘাত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। দুনিয়াতে যেভাবে নির্বাচন হয় শাসনতন্ত্র মেনে, আমরা সেভাবে নির্বাচন করব। আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করব। আমরা একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। যেখানে ভায়োলেন্সও হবে না। কিন্তু আমরা চাইলেই হবে না। সব দলের মতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দরকার।
পর্যবেক্ষক দল সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কিছু বলেনি। এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা করিনি। তবে আমরা চাই, সবাই নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু আমরা জোর করে কাউকে বলি না, নির্বাচনে অংশ নাও।
সব দলকে ভোটে নিয়ে আসতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বলেন, যারা নির্বাচন করতে চায় আমাদের দিক থেকে স্বাগতম। আসা না আসা তাদের সিদ্ধান্ত ও মাথাব্যথা।
ভোট কারচুপি নিয়ে এবং বেচাকেনা নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে থাকবে বার্তা দিয়ে মোমেন বলেন, আমরা কাউকে জোর করে ভোট দেওয়াই না বা কোনো দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করব না। আমরা চাই, তারা ইচ্ছামতো ভোট দেবে। এ রকম ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা বলেছি, ক্যাম্পেইন প্রসেসে যেন কোনো ধরনের ভায়োলেন্স না হয়। যেন ভোট বেচাকেনা না হয় বা ভোট কারচুপি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক। আমরা চাই না কেউ জোর করে কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করুক।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাকে ‘মার্কিন ঝড় আসছে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। ওই দেশের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মচারীর সঙ্গে আমাদের বেশ কিছুদিন ধরে অনেক যোগাযোগ হচ্ছে। একজনও বলে নাই যে মার্কিন ঝড় আসবে। পত্রপত্রিকায় একটু বেশি বাড়িয়ে বলে। আপনারা (গণমাধ্যম) এগুলো বানান। আপনাদের মাথা-মগজের মধ্যে কিছু গন্ডগোল আছে।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথাও আসছে গণমাধ্যমে- এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো তো আপনারা ডেকে আনছেন। আপনারা কি নিষেধাজ্ঞা চান? আপনারা বোধ হয় চান। সেজন্য ডেকে আনছেন। তারা শুধু একটা ভিসানীতি করেছে। তারা একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম সরকার। এসব ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ১৫ জন সংসদ সদস্য দেশটির সরকারপ্রধানের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আপনারা ওসব নিয়ে এত চিন্তিত কেন? দুনিয়ার অনেক জায়গায় আমরা টাকা দিয়ে কথা বলাতে পারি। টাকা দিলে গান গাইবে।