অনন্ত বিজয় স্মরণ: পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

রোববার (১২ মে) অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকান্ডের নয় বছর পূর্তিতে তার স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে। এরপর ওই এলাকায় প্রয়াত যুবনেতা মঈনুদ্দিন আহমদ জালালের উদ্যোগে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়। প্রতিবছর ১২ মে ওই স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পন করেন সিলেটের প্রগতিশীল রাজনীবিদ, লেখক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ অনন্ত বিজয়ের সহযোদ্ধারা।

রোববার দুপুর ১২ টায় পুস্পস্তবক অর্পন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অনন্ত বিজয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে তাকে হত্যার স্থানে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানেরও দাবি জানান বক্তারা।

গণজাগরম মঞ্চ, সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, অনন্ত হত্যাকান্ডের সাত বছর পর এই মামলায় রায় হয়। তবে রায় ঘোষণার দুইবছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত রায় কার্যকরের কোন উদ্যোগ নেই। এছাড়া মামলার রায়ে ৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলেও তিনজন এখনো পলাতক রয়েছেন।

বক্তারা পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে বলেন, অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা লোকদের হত্যার মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। তাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের স্বার্থেই এই হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর ও সব আসামিদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। অন্যথায় জঙ্গিরা আবার মাথাছাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেন তারা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, পরিবেশ কর্মী আব্দুল করিম কীম, আশরাফুল কবির, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, অনন্তর ভগ্নিপতি এডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর, লেখক ডা, এনাম আহমদ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী নিরঞ্জন সরকার অপু, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মাহবুব রাসেল, রাজীব রাসেল, দেবজ্যোতি দেবু, অরূপ বাউল, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, চক্রবর্তী, রনি দাশ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশ ‘যুক্তি’ নামের একটি বিজ্ঞানমনস্ত ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন। তিনি মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে বোনকে সাথে নিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার দস্তিদার দিঘীর পাশে তার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল যুবক। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

পরে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।

সে রাতেই সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন অনন্ত বিজয় দাশের ভাই রত্নেশ্বর দাশ।

২০২২ সালের ৩০ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই হত্যা মামলার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, উপজেলার খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ।

এছাড়া বিতর্কিত ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ছাড়া অপর তিন মৃত্যুদণ্ডাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক। অপর আসামী মান্নান রাহী কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।